Story of Nabokallol 2025 : নাটকের মঞ্চে যাঁরা তাঁদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নিবেদন করেন, তাঁরা শুধুমাত্র শিল্পী নন—তাঁরা একেকজন যোদ্ধা। শিল্প কখনোই একদিনে তৈরি হয় না। এর পেছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম, অভিজ্ঞতার সঞ্চয়, এবং এক অনবদ্য লড়াই। তবে এই লড়াইয়ের পেছনের গল্পগুলো প্রায়শই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়।
আজ বলব Nabokallol এর সংগ্রামের গল্প । আমার এক বন্ধু প্রায় দুই বছর আগে আমাকে নবকল্লোলের সাথে পরিচয় করিয়েছিল। সেই থেকে সুযোগ পেলেই আমি নাটকের প্রতি সুপ্ত ভালোবাসাকে প্রশ্রয় দিয়ে ছুটে যাই নাটকের মঞ্চে। নবকল্লোলের প্রযোজনা এবং নাট্যকারদের অভিনয় সম্পর্কে আমি ইতিপূর্বে বহুবার লিখেছি। এক কথায়, তাঁদের কাজ অসাধারণ, হৃদয়গ্রাহী।
লিখতে বসেছিলাম তাঁদের অভিনয়ের গভীরতা নিয়ে , তবে লিখতে বসার আগে নবকল্লোলের পেজের একটা পোস্ট চোখে পড়ল। ফলে লেখার মত পরিবর্তন করলাম। এবার আমি আলো ফেলতে চাই অন্য এক দিকের ওপর – নাটকের মঞ্চের পেছনের কঠোর অন্ধকার বাস্তব ।

গতকাল, ১২ই জানুয়ারি রবিবার, সন্ধ্যা ৬টায় আমি গিয়েছিলাম যোগেশ মাইম একাডেমিতে নবকল্লোল প্রযোজিত চারটি নাটক- নাটোরের সেই মেয়ে, শেয়াল, বিনোদিনী এবং অশোক দেখতে ।
গতকালের শো টি শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৬টায়। কিন্তু তা শুরু হতে হতে প্রায় ৬টা ৪০ মিনিট বেজে যায়।
তবে কি এটা নবকল্লোলের কোনো গাফিলতির ফল ?
না তা একদমই নয়।
সমস্যার মূল কারণ একদমই ভিন্ন।
নবকল্লোলের মতো থিয়েটার দল প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে লড়াই করে। কিন্তু তাঁদের এই লড়াই আরও কঠিন করে তোলে হল কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা। একটি সফল প্রযোজনা মঞ্চস্থ করার জন্য যে প্রযুক্তিগত ও বেসিক সুবিধাগুলো দরকার, তা বহুক্ষেত্রেই তাঁরা পান না।
কেন ?
এমনটা কেন হবে ?
সঠিক অর্থ ব্যয় করেও কেন তাঁরা হল কর্তৃপক্ষদের থেকে সঠিক পরিষেবা পাবে না ?
আমাদের মনে রাখতে হবে, “থিয়েটার আমাদের সমাজের আয়না।” হল কর্তৃপক্ষের এই গাফিলতি শিল্পীদের প্রতি এক চরম অবহেলার পরিচয় দেয়। শো শুরু হওয়ার আগে থেকেই থিয়েটারের দলগুলোকে অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা, প্রযুক্তিগত সমস্যার মতো একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তবুও, এই সমস্ত বাধা পেরিয়ে তাঁরা মঞ্চ আলোকিত করেন।
তাঁদের লড়াই শুধুমাত্র নিজেদের জন্য নয়, এটি আমাদের সবার জন্য। এই সংগ্রাম আমাদের জীবনে শিল্পের আলো জ্বালিয়ে রাখে।
আমি ভাগ্যবান যে, গতকাল শুধুমাত্র নাটকই দেখিনি, দেখেছি নবকল্লোলের এক অদেখা সংগ্রাম। এই দলটি আমাদের শুধু বিনোদন দেয় না, আমাদের জীবনযুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণাও দেয়। নবকল্লোলের মঞ্চ যেন শুধু একটি প্রেক্ষাগৃহ নয়, এটি সংগ্রামের গল্প, এটি শিল্পের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক।
ফলত নবকল্লোলের পুরো টিম – কে আমার কুর্নিশ ।এই কুর্নিশ শুধুমাত্র একজন দর্শক হিসাবে নয়, একজন সহমর্মী মানুষ হিসেবেও ।
সব শেষে বলি “থিয়েটারকে বাঁচিয়ে রাখুন, কারণ থিয়েটার আমাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।”
কলমে – অভিজিৎ মান্না ।
ছবি – নবকল্লোল
রচনাকাল – ১৩ ই জানুয়ারি ২০২৫ ।